আমার পরিবার,আমার বাড়ি

পরিবার (এপ্রিল ২০১৩)

ডাঃ সুরাইয়া হেলেন
  • ১৭
প্রায় ৩৫বছর,সেই ১৯৭৭ থেকে চাকুরীসূত্রে ঘুরে বেড়িয়েছি বিভিন্ন স্থানে!বাংলাদেশের আনাচে কানাচেও গেছি পোস্টিং নিয়ে!আজকালকার ডাক্তার ছেলে মেয়েদের মতো গ্রামে পোস্টিং নিয়ে ঢাকায় বসে চাকরী করার মানসিকতা ছিলো না!কর্মস্থলে থেকেই চাকরী করেছি।ছেলেমেয়েরাও গ্রামে পড়াশোনা করেই মানুষ হয়েছে!যদিও আমরা জন্ম থেকেই শহরে মানুষ!আমার তো বরং খুবই ভালো লাগতো খোলামেলা দূষণমুক্ত পরিবেশে,মুক্ত আলো হাওয়ায় বাস করতে।ছেলেমেয়েরাও প্রকৃতির কোলে ছুটে,হেসে খেলেই বেড়ে উঠেছে!রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার ভেতরে সরকারী বাসভবনে,সামনে ফুলবাগান,পেছনে সব্জীবাগান আর চারপাশে আম,জাম,কাঁঠাল,নারকেল গাছের ছায়ামায়ায় বিশাল জায়গা নিয়ে থাকার মাঝে আলাদা একটা আনন্দ ছিলো!সরকারী বাড়ি ,নিজের বাড়ির মতোই,কারোর খবরদারি নেই।ভেতরেই বাচ্চাদের খেলার মাঠ।বিকেল হতেই বাচ্চাদের হৈ হুল্লোড়ে সাথে বয়সীরাও মেতে উঠতো!সন্ধ্যা বা রাতে সবুজ ঘাসের ওপর পাটি পেতে লোড শেডিংয়ের সময় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাক্ষুস দেখা ভূতের গল্পও কম বিনোদনের ছিলো না!জামগাছের নিচের সেই বৈঠকি আড্ডার কথা এক জীবনে কখনোই ভুলতে পারবো না!জেলাতে সিভিল সার্জনের বিশাল বাংলো,রাজকীয় আরাম আয়েশ,এমনকি খেতখামার চিন্তাও করা যায় না এই রাজধানী শহরে!ডি.সি.,জেলা জজ,এস.পি.,সিভিল সার্জন আর প্রধান প্রকৌশলী ,এই ৫ব্যক্তি কোর অফিসার!ব্রিটিশ আমলের সেই রাজকীয় চাল এখনো বিবদ্যমান এই পঞ্চপান্ডবের পরিবার পরিজনের জন্যও!অবশেষে ঢাকায় এলাম।ঢাকা আমাকে আকর্ষণ করেনি কখনো!শ্বশুরবাড়িতেই এসে উঠলাম ।অসুবিধার কোন কারণ নেই,বিশাল বাড়ি!তারপরও শ্বাশুড়ি,দেবর ভাশুর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,এতো বড় চাকরী করলে তোমরা,নিজেদের বাড়িঘর করতে হবে না?এতোদিনে টনক নড়লো আমাদের!
জীবনের শেষপ্রান্তে এসে ২৮ফেব্রুযারি,আমার ৫৯তম জন্মদিনে উঠবো নিজের ঠিকানায়!আমার স্বামী,এক কন্যা,এক পুত্রকে নিয়ে উঠে এলাম নিজের বাড়িতে!আমার স্বামী বলেন,‘যাযাবর জীবন সাঙ্গ হলো,এই শেষ যাত্রা,আর মালামাল টেনে নিয়ে ঘুরতে হবে না,এখান থেকেই চলে যাবো চিরকালের না ফেরার দেশে!
শুনে মনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো!মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে যেন নিজেরাই এগিয়ে যাচ্ছি মৃত্যুর পানে!নিজের বাড়ি,সুন্দর সাজানো গোছানো,বিলাস বহুল,স্বাধীন ঠিকানা!সবার মন আনন্দে ভরে উঠেছে!কিন্তু আমার মন খারাপ ভাবটা যাচ্ছে না!আমি এমন কেন?আমি কি বোহেমিয়ান জীবনই পছন্দ করি?নয়তো স্থিতি আমার ভালো লাগছে না কেন?নাকি শেষ যাত্রা কথাটাই আমাকে ভীত করে তুলেছে?!জবাবটা আমি নিজেও জানি না!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক নাকি শেষ যাত্রা কথাটাই আমাকে ভীত করে তুলেছে? বাস্তবতা এমনিই বলে দিদি...হয়তো তাই...খুব সুন্দর উপসংহার....অনেক ভালো লাগলো....
অনেক ধন্যবাদ মিলন ।
তানি হক খুব ভালো লাগলো ..আপু জীবনের গল্প ...আমাদের জীবন টা যে এমন ই ..সব কিছুই ভঙ্গুর ..আর এলোমেলো ..যতই ত়া আমরা অটল আর শক্ত করি না কেন ..সব কিছু ই একদিন চুর চুর হয়ে যায় .. :( আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ...আশাকরি আপনি ভালো আছেন ..আল্লাহর রহমতে ..
তোমাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ তানি...
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ঝকঝকে ছোট সুন্দর একটা গল্প। চমৎকার লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইল।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।ভালো থাকুন নিরন্তর ।
রাশেদুল ফরহাদ পড়তে পড়তে শেষে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল। হাসনরাজার গানটা মনে পড়লো," ভালা করি ঘর বানায়া, ক'দিন থাকবাম আর, আয়না দিয়া চাইয়্যা দেখি পাকনা চুল আমার।"
হ্যাঁ,শেষ জীবনে সবার মাঝেই বোধকরি এই মৃত্যু চিন্তটি এসেই যায়!ধন্যবাদ আপনাকে ।
সুমন কর্মজীবন চিন্তা চেতনা সব কিছুই বললেন এত কম কথায়! এটাও একটা মুন্সীয়ানা। শেষ যাত্রার কথাটা সবাইকেই আসলে ভীত করে। অনেক সুন্দর লিখেছেন আপা। আপনার গল্প দিয়েই এ সংখ্যার সবগুলো লেখা পড়ায় ইতি টানলাম। এটাই ছিল শেষ :)
অনেক ধন্যবাদ সুমন ।শেষ হলেও আমার লেখা যে আপনার পড়া থেকে বাদ পড়েনি,তাতেই আমি খুশি ।
sakil বেশ সুন্দর করে নিজের অভিগতার কথা নিজের সংসারের কথা গুছিয়ে বলে গেলেন অনায়াসে।সুন্দর গল্প
ধন্যবাদ শাকিল ।কেমন আছেন?গল্প তো বাস্তব জীবনেরই প্রতিচ্ছবি!
ম তাজিমুল ইসলাম অনেক ভাল লাগলো -----
অনেক ধন্যবাদ তাজিমুল ।
তাপসকিরণ রায় মৃত্যু,এই চিরন্তন সত্যি কথাটি ভাবতে সবাই ভয় পাই--তবু নূতন ভাবে আপনার কলমে উপস্থাপনায় আরও হৃদয়প্রাহী হয়ে ধরা পড়লো।ধন্যবাদ রইল।
আপনাকেও ধন্যবাদ দাদা ।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি মনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো!মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে যেন নিজেরাই এগিয়ে যাচ্ছি মৃত্যুর পানে!নিজের বাড়ি,সুন্দর সাজানো গোছানো,বিলাস বহুল,স্বাধীন ঠিকানা!সবার মন আনন্দে ভরে উঠেছে!কিন্তু আমার মন খারাপ ভাবটা যাচ্ছে না!আমি এমন কেন?আমি কি বোহেমিয়ান জীবনই পছন্দ করি?নয়তো স্থিতি আমার ভালো লাগছে না কেন?নাকি শেষ যাত্রা কথাটাই আমাকে ভীত করে তুলেছে?!জবাবটা আমি নিজেও জানি না! ............// চাকুরী জীবনের বাস্তব কিছু স্মৃতিময় অভিজ্ঞতার কথা গুলো কি সুন্দর করেই না তুলে ধরেছেন......পড়ে মুগ্ধ হলাম...কারণ ডাক্তারদের কোন সরকারই আদেশ করেও তাদের সেবার ক্ষেত্রকে গ্রাম মুখি করতে পারে নাই বা ডাক্তার সাহেবরাও তা কথনো চাননাই...আপনার এই জীনালেখ্য পড়ে মাথাটা শ্রদ্ধায় নত হয়ে এল সে জন্য আপনাকে স্বশ্রদ্ধ সালাম জানাই....হেলেন আপা যদিও আপনি এ্যাপ্রিসিয়েশনের কথা উল্লেখ করেননি তবু ধরে নেয়া যায় আপনিই সেই কর্মজীবি একজন মহিলা ডাক্তার যিনি সমাজের কাছ থেকে অথবা ডিপার্টমেন্টের কাছ থেকে তা পাওয়ার শত ভাগ যোগ্যতা রাখেন।.......তাই আপনার মুখে শেষ যাত্রার পার্থিব কথা শুনলে ভয় হয় আদর্শ হয়ে আপনি অনেক দিন আমাদের মাঝে থাকবেন এটাই আশা করি...............অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে...........
অনেক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জ্যোতি ।আমার চোখ ভিজে গেলো!
রফিক আল জায়েদ বিয়ের সময় কনের পরিবার কাঁদে আর বরের পরিবার হাসে। কারণ কনের পরিবার তার আদুরে মেয়েটিকে হারালেও বরের পরিবার অর্জন করে। পালকিতে করে বরের বাড়িতে গেলেও এখান থেকেই তার শব যাত্রা শুরু হয়। অতিরঞ্জিত কথার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আর গল্পে মৃত্যুকে স্বরণ করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ জায়েদ ।অতি রূঢ় সত্য কথন!বরের পরিবার সেই অর্জনকে আপদ মনে করে!

২৩ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪